সংবেদি অঙ্গ (ষষ্ঠ অধ্যায়)

ষষ্ঠ শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান | NCTB BOOK
2.1k
Summary

আমাদের দেহ একটি অত্যন্ত নিখুঁত যন্ত্র, যার প্রতিটি অংশ সঠিকভাবে গড়া এবং নিজ নিজ কাজ সম্পন্ন করে। পঞ্চ ইন্দ্রিয়র মাধ্যমে আমরা অনুভব করি এবং এটি আমাদের দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানোর ক্ষমতা দেয়। উদাহরণস্বরূপ, চোখে মাছি উড়ে এলে পাতা বন্ধ হয়ে যায় এবং গরম চুলায় হাত পড়লে আমরা হাত সরিয়ে নেই।

এই অধ্যায়ে পঞ্চ ইন্দ্রিয় ও তাদের কার্যকরিতা নিয়ে আলোচনা করা হবে এবং আমরা নিম্নলিখিত লক্ষ্যে পৌঁছাবো:

  • সংবেদি অঙ্গের কাজ ব্যাখ্যা করা
  • পরীক্ষণ ও পর্যবেক্ষণে সংবেদি অঙ্গের ব্যবহার প্রদর্শন করা
  • সংবেদি অঙ্গের যত্ন নেওয়ার কৌশল ব্যাখ্যা করা
  • সংবেদি অঙ্গের যত্নের বিষয়ে সচেতন হওয়া ও অন্যদের সচেতন করা

আমাদের দেহ একটি আজব যন্ত্র। যন্ত্রটির গড়ন এমন নিখুঁত যে এর কথা ভাবতেই অবাক লাগে। যন্ত্রের প্রতিটি অংশ মাপে মাপে বানানো। একটুও কম-বেশি নেই। আর যন্ত্রটিকে ঠিক ঠিক চালানোর জন্য প্রতিটি অংশ নিজ নিজ কাজ করে চলে। কাউকে কিছু বলতে হয় না। কার কী কাজ সে আপনিই বুঝে নিচ্ছে। আমাদের কিছু বুঝার আগেই ঘটনা ঘটে যায়। যেমন- চোখের দিকে সাঁই করে একটি মাছি উড়ে এলো ওমনি চোখের পাতা গেল বন্ধ হয়ে। অসাবধানে গরম চুলায় হাত পড়লে, তুমি হাত সরিয়ে নেবে। পায়ে কাঁটা ফুটার সাথে সাথে 'উঃ মাগো' বলে কাতরাবে। সারা শরীর জেনে গেল কী একটা পায়ে বিধল। আমরা এগুলো অনুভব করতে পারি পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে। এ অধ্যায়ে আমরা পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের সম্পর্কে আলোচনা করব।

এই অধ্যায় শেষে আমরা
• সংবেদি অঙ্গসমূহের কাজ ব্যাখ্যা করতে পারব।
• পরীক্ষণ ও পর্যবেক্ষণে সংবেদি অঙ্গের ব্যবহার প্রদর্শন করতে পারব।
• সংবেদি অঙ্গের যত্ন নেওয়ার কৌশল ব্যাখ্যা করতে পারব।
• সংবেদি অঙ্গের যত্নের বিষয়ে নিজে সচেতন হব ও অন্যকে সচেতন করব।

Content added By

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

অংশটুকু পড় প্রশ্নের উত্তর দাও

বারো বছর বয়সী একজন ছেলে অনিয়মিতভাবে গোসল করে, এমনকি গোসলের পর নির্দিষ্ট তোয়ালে ব্যবহার করে না। সম্প্রতি তার মাথায় খুশকির মাত্রা খুব বেড়েছে। এছাড়া তার গায়ে খোস পাঁচড়া হওয়ায় সে ফেরিওয়ালর কাছ থেকে মলম কিনে লাগায়।

ত্বকের
চুলের সমস্যা
গ্রন্থির
মস্তিষ্কের
চিত্রের প্রশ্নের উত্তর দাও

স্বাদকোরক
ঘ্রাণ সংবেদন স্নায়ু
আলা জিহ্বা
পাতা

সংবেদি অঙ্গ (পাঠ ১-৩)

651

আনিকা এবার বার্ষিক পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে যষ্ঠ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। ও বরাবরই লেখাপড়ায় ভালো। সবাই বলে ওর মাথা ভালো। মাথা ভালো মানে মগজ ভালো। আমাদের দেহের চালক হচ্ছে মস্তিষ্ক। মস্তিষ্ককে আমরা মগজ বলে থাকি। আমাদের দেহের সব কাজই চলছে মস্তিষ্কের হুকুমে। মস্তিষ্ক থাকে মাথার খুলির মধ্যে। খুলির মাঝখানে বসেই আমাদের দেহের বাইরের ও ভিতরের কাজকর্ম চালায় কীভাবে? চোখ, কান, নাক, ত্বক ও জিহ্বা বাইরের সকল খবরা-খবর জোগাড় করে মস্তিষ্ককে জানিয়ে দেয়। চোখ দিয়ে দেখি, কান দিয়ে শুনি, জিহ্বা দিয়ে আমরা খাবারের স্বাদ গ্রহণ করি, ত্বক দিয়ে গরম, ঠান্ডা, তাপ, চাপ অনুভব করি। এগুলো সংবেদি অঙ্গ। এদের সাহায্যে মস্তিষ্ক জানতে পারে বাইরের সকল খবরা-খবর। যেমন: তুমি রাস্তা পার হবে, হঠাৎ করে গাড়ি তোমার সামনে এসে পড়ল। তোমার চক্ষু তখনই জানিয়ে দেবে মস্তিষ্ককে। মস্তিষ্ক তখন তোমার মাংসপেশিদের বলবে দাঁড়িয়ে যাও, এখন রাস্তা পারাপারের দরকার নেই। অমনি তোমার পা দুটো দাঁড়িয়ে যাবে।

চোখ

আমরা চোখ বা অক্ষি দিয়ে পৃথিবীর সকল জিনিস দেখতে পাই। চোখ কীভাবে গঠিত? মাথার সামনে দুটো অক্ষি কোটরের মধ্যে এক জোড়া চোখ থাকে। ছয়টি পেশির সাহায্যে প্রতিটি চোখ অক্ষি কোটরে আটকানো থাকে। এই পেশিগুলোর সাহায্যে অক্ষিগোলক নড়াচড়া করানো যায়। আমরা যাকে অশ্রু বলি তা হলো চোখের পানি। এ অশ্রু আসে কোথা থেকে? অশ্রুগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত তরল যা চোখের পানি বা অশ্রু নামে পরিচিত। অশ্রু সবসময় চোখকে ভেজা রাখে, বাইরের ধুলাবালি ও জীবাণু পড়লে তা ধুয়ে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। চোখের ত্বক স্বচ্ছ আর পেছনের অংশ কালো। তার ফলে আমাদের চোখ হয়েছে ছোট্ট ক্যামেরার মতো। চোখের বিভিন্ন অংশ ও কাজগুলো নিম্নরূপ-
(১) চোখের পাতা: চোখের বাইরের আবরণ। চোখের পাতা খোলা ও বন্ধ করা যায়। এটা বন্ধ করে চোখকে ধুলাবালি থেকে রক্ষা করা যায়।
(২) কনজাংকটিভা: চোখের পাতা খুললেই চোখের যে অংশটুকু আমরা দেখতে পাই, সে অংশটুকু একটা পাতলা পর্দা দিয়ে ঢাকা থাকে তার নাম কনজাংকটিভা। এই পর্দাটি জীবানু দ্বারা আক্রান্ত হলেই তাকে কনজাংটিভাইটিস বা চোখ উঠা রোগ বলে।
(৩) অক্ষিগোলক: এটি গোলাকার বলের মতো অঙ্গ। গোলকটি তিনটি স্তর নিয়ে গঠিত।
ক) স্ক্লেরা: অক্ষিগোলকের বাইরের সাদা, শক্ত ও পাতলা স্তরটি হলো স্ক্লেরা। এটি চোখের আকৃতি রক্ষা করে। এর ভিতর দিয়ে কোনো আলো প্রবেশ করতে পারে না।
কর্নিয়া: স্ক্লেরার সামনের চকচকে অংশটি হলো কর্নিয়া। এ অংশটি একেবারেই স্বচ্ছ। এর ভিতর দিয়েই আলো চোখের ভিতর প্রবেশ করে।

আইরিশ: কর্নিয়ার পেছনে কালো গোলাকার পর্দা থাকে। একে আইরিশ বলে। এটি কোরয়েডের অংশ আইরিশের মাঝখানে একটি ছিদ্র থাকে, যাকে পিউপিল বলে। আইরিশ পেশি দিয়ে তৈরি। একে আমরা সাধারণত চোখের মণি বলে থাকি। আইরিশের পেশিগুলো সংকুচিত ও প্রসারিত হতে পারে। আইরিশের পেশি সংকোচন প্রসারণের ফলে পিউপিল ছোটো বড়ো হতে পারে। এর ফলে আলোকরশ্মি রেটিনায় প্রবেশ করতে পারে।

লেন্স: পিউপিলের পেছনে একটি দ্বি-উত্তল লেন্স থাকে। লেন্সটির মাঝখানের দুই দিক উঁচু আর আগাটা সরু। লেন্সটি এক বিশেষ ধরনের সিলিয়ারি পেশি দ্বারা আটকানো থাকে। এ পেশিগুলো সংকুচিত ও প্রসারিত হতে পারে। এদের সংকোচন প্রসারণ দরকার মতো লেন্সের আকৃতি পরিবর্তন করতে পারে।

গ) রেটিনা: রেটিনা অক্ষিগোলকের সবচেয়ে ভিতরের স্তর। এটি একটি আলোক সংবেদি স্তর। এখানে রড ও কোন নামে দুই ধরনের কোষ রয়েছে।

চোখের লেন্সটি চক্ষু গোলককে সামনে ও পেছনে দুটি অংশে বিভক্ত করে। এই অংশগুলোকে প্রকোষ্ঠ বলে। সামনের প্রকোষ্ঠে জলীয় এবং পেছনের প্রকোষ্ঠে এক বিশেষ ধরনের জেলীর মতো তরল পদার্থ থাকে, যা চক্ষুগোলকে আলোকরশ্মি প্রবেশ, পুষ্টি সরবরাহ এবং চক্ষুগোলকের আকার বজায় রাখতে সহায়তা করে।

চোখের যত্ন: চোখ একটি কোমল অঙ্গ, খুব যত্নে রাখতে হবে। ঠিকমতো যত্ন না নিলে চোখে নানা অসুখ হতে পারে। যেভাবে চোখের যত্ন নেওয়া যায় তাহলো-

• ঘুম থেকে উঠে ও বাইরে থেকে আসার পর অবশ্যই পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে চোখ দুটি পরিষ্কার করা।
• চোখ মোছার জন্য পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করা।
• নিয়মিত সবুজ শাকসবজি ও রঙিন ফলমূল খাওয়া। এগুলোতে ভিটামিন এ থাকে। এগুলো চোখের জন্য খুবই ভালো। এগুলো খেলে রাতকানা হওয়া এড়ানো যায়।

কাজ: মডেল বা চার্টের সাহায্যে চোখের বিভিন্ন অংশগুলো চিনে নাও। এবার খাতার মানুষের চোখের একটি চিত্র এঁকে এর অংশগুলোর নাম লিখ।

নতুন শব্দ: সংবেদি অঙ্গ, রেটিনা, লেন্স, অক্ষিগোলক, পিউপিল, আইরিশ, স্ক্লেরা ও কনজাংকটিভা।

Content added By

কান বা কর্ণ (পাঠ ৪-৫)

1.2k

আমরা কী দিয়ে শুনি? আমরা কান দিয়ে শুনি। কান না থাকলে আমরা শুনতে পেতাম না। কথাও বলতে পারতাম না, কারণ কথা বলাটা তো শিখতে হয় শুনে শুনে।

আমাদের মাথার দুই পাশে দুটো কান বা কর্ণ আছে। কর্ণ বা কান আমাদের শুনতে ও দেহের ভারসাম্য রক্ষার প্রধান অঙ্গ হিসেবেও কাজ করে। আমাদের কান তিনটি অংশে বিভক্ত। যথা- ১. বহিঃকর্ণ, ২. মধ্যকর্ণ ও ৩. অন্তঃকর্ণ।

১। বহিঃকর্ণ: পিনা, কর্ণকুহর ও কর্ণপটহ নিয়ে বহিঃকর্ণ গঠিত।
(ক) পিনা: এটি কানের বাইরের অংশ। মাংস ও কোমলাস্থি দিয়ে গঠিত। শব্দ কর্ণকুহরে পাঠানো এর প্রধান কাজ।
(খ) কর্ণকুহর: পিনা একটি নালির সাথে যুক্ত। এ নালিটিকে কর্ণকুহর বলে।
(গ) কর্ণপটহ: কর্ণকুহর শেষ হয়েছে একটা পর্দায়। এ পর্দাটির নাম কর্ণপটহ বা টিমপেনিক পর্দা। কর্ণপটহ বহিঃকর্ণের শেষ অংশ।

২। মধ্যকর্ণ: বহিঃকর্ণ ও অন্তঃকর্ণের মাঝখানে মধ্যকর্ণ অবস্থিত। এটা একটা বায়ুপূর্ণ থলি যার মধ্যে ম্যালিয়াস, ইনকাস ও স্টেপিস নামে তিনটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হাড় বা অস্থি রয়েছে। অস্থিসমূহের মাধ্যমে শব্দ তরঙ্গ বা ঢেউ অন্তঃকর্ণে পৌঁছায়। কানের সাথে গলার সংযোগের জন্য ইউস্টেশিয়ান টিউব নামে একটি নল আছে। এ নলটির কাজ হলো কর্ণপটহের বাইরের ও ভেতরের বায়ুর চাপ সমান রাখা।

৩। অন্তঃকর্ণ: এটি অডিটরি ক্যাপসুল অস্থির মধ্যে অবস্থিত। অন্তঃকর্ণ দুটি প্রধান প্রকোষ্ঠে বিভক্ত।
(ক) ইউট্রিকুলাস: অন্তঃকর্ণের এ প্রকোষ্ঠটি তিনটি অর্ধবৃত্তাকার নালি দিয়ে গঠিত। এদের ভিতরে আছে খুব সূক্ষ্ম লোমের মতো স্নায়ু ও রস। নালির ভিতরের এ রস যখন নড়ে বা আন্দোলিত হয়, তখনই স্নায়ুগুলো উদ্দীপ্ত হয়। আর তখনই সে উদ্দীপনা মস্তিষ্কে পৌঁছায়। এই অংশ দেহের ভারসাম্য রক্ষার কাজ করে।
(খ) স্যাকুলাস: অন্তঃকর্ণের এই প্রকোষ্ঠের চেহারা অনেকটা শামুকের মতো প্যাঁচানো নালিকার মতো। একে ককলিয়া বলে। ককলিয়ার ভেতরে শ্রবণ সংবেদি কোষ থাকে। প্যাঁচানো নালিকা এক ধরনের রসে পূর্ণ থাকে। এই অংশ শ্রবণের কাজ করে।
কানের যত্ন: কান আমাদের শ্রবণ ইন্দ্রিয়। কানের সমস্যার কারণে আমরা বধির হয়ে যেতে পারি। কানের যত্ন নেওয়ার জন্য যা করতে হবে, তাহলো-
• নিয়মিত কান পরিষ্কার করা।
• গোসলের সময় কানে যেন পানি না ঢোকে সেদিকে সতর্ক থাকা।
• কানে বাইরের কোনো বস্তু বা পোকামাকড় ঢুকলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া।
• উচ্চ শব্দে গান না শুনা।

Content added By

পাঠ-৬

236
কাজ: মডেল বা চার্টের সাহায্যে কানের বিভিন্ন অংশগুলো চিনে নাও। এবার খাতায় মানুষের কানের একটি চিত্র এঁকে এর অংশগুলোর নাম লিখ। বিভিন্ন অংশের কাজ উল্লেখ কর।

নতুন শব্দ : কর্ণপটহ, মধ্যকর্ণ, অন্তঃকর্ণ, অর্ধবৃত্তাকার নালি ও ককলিয়া।

Content added By

নাক (পাঠ-৭)

765

নাক: আমরা নাক দিয়ে কোনটা সুগন্ধ বা দুর্গন্ধ তা অনুভব করতে পারি। নাক দিয়ে আমরা শ্বাস নেই। ফুলের সুগন্ধ প্রাণভরে গ্রহণ করি আর পচা, ময়লা ও আবর্জনার গন্ধ পেলে নাকে কাপড় দেই। মুখ গহ্বরের উপরে নাক অবস্থিত। এর দুটো অংশ আছে, (১) নাসারন্ধ্র ও (২) নাসাপথ।

(১) নাসারন্ধ্র : নাকের যে ছিদ্র দিয়ে বাতাস দেহের ভেতরে ঢোকে তাকে নাসারন্ধ্র বলে।
(২) নাসাপথ: এটা নাসারন্ধ্র থেকে গলার পেছন ভাগ বা গলবিল পর্যন্ত
বিস্তৃত একটি গহ্বর। এ গহ্বরটি ত্রিকোণাকার। পাতলা প্রাচীর দিয়ে গহ্বরটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে। এর সামনের ভাগ লোম দ্বারা আবৃত থাকে ও পেছনের দিকটা পাতলা আবরণী ঝিল্লি দ্বারা আবৃত থাকে। এই ঝিল্লিকে ঘ্রাণঝিল্লিও বলা হয়। এতে থাকে সূক্ষ্ম রক্তনালিকা যা অসংখ্য ঘ্রাণকোষের সাথে সংযোগ রক্ষা করে।

নাকের যত্ন: নাক দিয়ে আমরা ঘ্রাণ নিই। শ্বাস-প্রশ্বাস চালাই, নাকের মধ্যে শ্লেষা ঝিল্লির আবরণ থাকে। শিশুদের নাকের শ্লেষার সাথে ধুলাবালি জমে, এগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা প্রয়োজন।

জিহবা

রাকিবের খুব মিষ্টি পছন্দ। মিষ্টি দেখলে ওর জিভে পানি আসে। জিভ বা জিহ্বা দিয়ে আমরা খাদ্যবস্তুর টক, ঝাল, মিষ্টি, তিতা স্বাদ গ্রহণ করে থাকি। এটা আমাদের স্বাদ ইন্দ্রিয়। মুখ গহ্বরে অবস্থিত লম্বা পেশিবহুল অঙ্গটি হল জিহ্বা। জিহ্বার উপরে একটি আস্তরণ আছে, এতে বিভিন্ন স্বাদ গ্রহণের জন্য স্বাদ কোরক থাকে।

জিহ্বার কাজ
• খাদ্যের স্বাদগ্রহণ করা।
• খাবার গিলতে সাহায্য করা।
• খাদ্যবস্তুকে নেড়েচেড়ে দাঁতের নিকট পৌঁছে দেয়। ফলে খাদ্যবস্তু চিবানো সহজতর হয়।
• খাদ্যবস্তুকে লালার সাথে মিশ্রিত করতে সাহায্য করে।
• জিহ্বা আমাদের কথা বলতে সাহায্য করে।

জিহ্বার যত্ন

খাদ্য পরিপাকের জন্য জিহ্বা একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। জিহ্বার যত্ন নিতে হলে যা করতে হবে তা হলো-
• দাঁত ব্রাশ করার সময় নিয়মিত জিহ্বা পরিষ্কার করা।
• শিশুদের নিয়মিত জিহ্বা পরিষ্কার করা উচিত। তা না হলে জিহ্বায় ছত্রাকের সংক্রমণ হতে পারে।
• অনেক রোগের কারণে জিহ্বার উপর সাদা বা হলদে পর্দা পড়ে। জ্বর হলে সাধারণত এটা হয়। এ সময় পানিতে লবণ গুলে কুলকুচি করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
• শিশুদের জিহ্বা নিয়মিত পরিষ্কার না করলে জিহ্বার উপর দইয়ের মতো দেখতে ছোটো ছোটো দাগ দেখা দেয়। এটা এক প্রকার ছত্রাকের সংক্রমণ থেকে হয়।
• মুখ ও জিহ্বায় ঘা হলে অতি তাড়াতাড়ি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
নতুন শব্দ: স্বাদ কোরক, নাসাপথ ও গলবিল।

Content added By

ত্বক ও ত্বকের যত্ন (পাঠ-৮)

665

আমরা শরীরের উপর দিয়ে পিঁপড়ে হেঁটে গেলে টের পাই। কোনো জিনিস গরম না ঠান্ডা তা বুঝতে পারি। কেউ তোমাকে ছুঁলে তাও বুঝতে পার। এগুলো কে করে? কীভাবে ঘটে? চর্ম বা ত্বকের সাহায্যে এগুলো ঘটে।

ত্বক বা চামড়া

যেসব অঙ্গ দিয়ে আমাদের দেহ গঠিত, সেগুলো যাতে রোগজীবাণু বা বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা পায়, সেজন্য সমস্ত দেহ চামড়া বা ত্বক দিয়ে ঢাকা থাকে। এ ত্বকই হচ্ছে আমাদের দেহের আবরণ। ত্বকের দুটি স্তর আছে, একটি উপচর্ম বা বহিঃত্বক এবং অন্যটি অন্তঃচর্ম বা অন্তঃত্বক।
উপচর্ম: উপচর্ম হচ্ছে ত্বকের বাইরের আবরণ। হাতের তালু ও পায়ের তালুর চামড়া বা ত্বক খুব পুরু আবার ঠোঁটের চামড়া বা ত্বক পাতলা। এ উপচর্ম থেকেই লোম, চুল ও নখের উৎপত্তি হয়। উপচর্মে লোমকূপও রয়েছে।

অন্তঃচর্ম বা অন্তঃত্বক: অন্তঃত্বকে রয়েছে রক্তনালি ও স্নায়ু। এ ছাড়াও রয়েছে লোমের মূল, ঘর্মগ্রন্থি, তেলগ্রন্থি, স্বেদগ্রন্থি ইত্যাদি। লোমহীন স্থানে অর্থাৎ করতল ও পদতলে স্বেদগ্রন্থির সংখ্যা বেশি থাকে।

ত্বকের সাধারণ কাজ

• দেহের ভিতরের কোমল অংশকে বাইরের আঘাত, ঠান্ডা, গরম, রোদ ইত্যাদি থেকে রক্ষা করে।
• দেহে রোগজীবাণু ঢুকতে বাধা দেয়।
• ঘাম বের করে দিয়ে শরীর ঠাণ্ডা ও সুস্থ রাখে।
• দেহের ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দেয়।
• সূর্য রশ্মি থেকে দেহকে রক্ষা করে।

ত্বকের যত্ন

ত্বক আমাদের দেহের বাইরের আবরণ তৈরি করে। ত্বকের যত্ন নিতে হলে যা করা দরকার, তা হলো-
• নিয়মিত গোসল করা। নিয়মিত গোসল করলে ত্বক বা চামড়ার সংক্রমণ, খুশকি, চুলকানি ইত্যাদি সমস্যা এড়ানো যায়।
• অন্যের ব্যবহার করা তোয়ালে ব্যবহার করা উচিত নয়। দুই-একদিন পরপর নিজের ব্যবহৃত তোয়ালে বা গামছা গরম পানি ও সাবান দিয়ে পরিষ্কার করা।
• ত্বকে কোনো রকম রোগ (যেমন- খোসপাঁচড়া, দাদ) দেখা দিলে ডাক্তারের পরমর্শ নিতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো মলম ব্যবহার করা যাবে না।

কাজ: মডেল বা চার্ট দেখে ত্বকের চিত্র অঙ্কন কর এবং এর বিভিন্ন অংশ চিহ্নিত করো।

এই অধ্যায়ে আমরা যা শিখলাম-
• চোখের লেন্স দ্বিউত্তল।
• সিলিয়ারি পেশি সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে লেন্সকে বাঁকাতে, গোল ও চ্যাপ্টা করতে পারে।
• আইরিশ পেশি সংকোচন-প্রসারণের মাধ্যমে পিউপিল ছোট বড় করা যায়।

Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...